ব্যাংক চেক কত প্রকার এবং বৈশিষ্ট্যসহ যাবতীয় তথ্য জেনে নিন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৪৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে

ব্যাংক চেক কত প্রকার

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্যাংক চেক কত প্রকার সেটা জানার আগে আরো কিছু বিষয়াদি আপনাদের অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। চেক হলো এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল যেটি যে কাউকে প্রদান করা যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানকেও হস্তান্তর করা যায়। আবার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য একজন আমানতকারী এই দলিলটি ব্যবহার করে থাকে। যদিও বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যুগ তবুও ব্যাপক হারে চেকের ব্যবহার পরিলক্ষিত করা যায়।

সাধারণ সজ্ঞা মতে একটি ব্যাংক তার গ্রাহককে টাকা উত্তোলনের জন্য শর্তহীন আদেশপত্র প্রদান করে থাকে তার নামই হচ্ছে চেক। এব্যাপারে আইন হচ্ছে, যদি সকল শর্ত ঠিক থাকে তবে চাহিদা মাত্র ব্যাংক টাকার প্রদানের জন্য বাধ্য থাকবে। সাধারণভাবে হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা, গ্রাহকের স্বাক্ষর এবং অন্যান্য তথ্য গুলি স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকলেই ব্যাংক সেটির পরিবর্তে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য।

বিভিন্ন অর্থনীতি বিদদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি হলো এমন একটি দলিল যা এর প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত থাকে এবং এর মাধ্যমে কোন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ উত্তোলনের জন্য অনুমতি প্রদান করেন।

ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

আমি আপনাদের সাথে এসম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি বিষয় গুলি আলোচনা করার চেষ্টা করছি। যাতে করে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর আপনাদের অন্য কোন তথ্য জানার বাকি না থাকে। ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার আগে এর বৈশিষ্ট্য গুলি ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত। এতে করেও আপনি সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। সারা বিশ্বজুড়ে একটি ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য তালিকা আকারে নিচে আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলো।

• এই কাগজটি অবশ্যই লিখিত এবং ছাপানো অবস্থায় থাকবে। শুধুমাত্র ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটি আপনাকে প্রদান করতে পারবে।

• যথাযথ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। এছাড়া চেকে সর্বমোট পক্ষ থাকবে ৩ টি।

• ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটির হস্তান্তরযোগ্যতা। অর্থাৎ এর মালিক চাইলে যে কোন ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কাউকে এটি প্রদান করতে পারবেন। যাকে প্রদান করা হবে তিনিও একই নিয়মে প্রতিষ্ঠান হতে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। এজন্য দলিলে অবশ্যই আমানতকারীর স্বাক্ষর এবং অন্যান্য তথ্যাবলি থাকতে হবে।

• একটি চেকের মাধ্যমে শুধু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা যাবে এবং দলিলে অবশ্যই তারিখ উল্লেখ করা থাকবে।

• চেক একটি শর্তহীন দলিল। চাহিবা মাত্র ব্যাংক অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে।

• এতে দাগ কাটার সুযোগ আছে অর্থাৎ কোন ভুল হলে সেটা কেটে দিয়ে পুনরায় লেখার নিয়ম রয়েছে।

• অর্থের পরিমাণ কথা এবং অংকে উভয় ভাবে লিখতে হবে।

ব্যাংক চেক কত প্রকার

দিন দিন সভ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে লেনদেনের ধরন। বর্তমান বিশ্বের গ্রাহকদের বিভিন্নমুখী প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের চেক ইস্যু করতে পারে। সেগুলো প্রকারভেদ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. বাহক চেক (বেয়ারার চেক)

কোন ব্যক্তি কিংবা আমানতকারী সরাসরি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে নিজে অথবা বাহক হয়ে কোন অ্যাকাউন্ট হতে সরাসরি অর্থ উত্তোলন করতে পারে এমন ধরনের যে কি হচ্ছে।

২. অর্ডার চেক

যদি আমানতকারী অথবা তার আদেশ অনুযায়ী অন্য কাউকে তার একাউন্টে অর্থ প্রদান করতে হয় চেকের মাধ্যমে তাহলে সেটিকে বলা হয় অর্ডার চেক।

৩. দাগ কাটা চেক

উপরের বাহক এবং অর্ডার চেকের আড়াআড়িভাবে দাগ দিয়ে ক্রসের মত করে দিলে সেটাকে বলা হয় ক্রস চেক বা দাগ কাটা চেক।

এধরনের চেকের আবার ২ টি ভাগ রয়েছে একটি হচ্ছে সাধারণভাবে দাগ কাটা এবং অপরটি হচ্ছে বিশেষভাবে দাগ কাটা।

৪. পূর্বের তারিখের চেক

যদি কোন চেকের তারিখ বর্তমান সময় হতে পূর্বের কোন তারিখ দেওয়া হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় পূর্বে তারিখের চেক।

৫. পরের তারিখের চেক

ভবিষ্যতে অর্থ উত্তোলনের জন্য যদি কোন সময় থেকে পরের তারিখ দেওয়া হয় তাহলে তাকে বলা হয় পোস্টডেটেড বা পরের তারিখের চেক।

৬. স্টিল বা বাসি চেক

একটি চেক ইস্যু বা লেখার পর যদি কমপক্ষে ৬ মাস পরে সেটি দিয়ে ব্যাংকে অর্থ উত্তোলনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তবে তাকে বলা হয় বাঁশি চেক। তবে ব্যাংক এই ধরনের চেকের বিপরীতে ব্যাংক কোন অর্থ প্রদান করে না।

৭. হারিয়ে যাওয়া চেক

যদি কোন চেকে নাম, টাকার পরিমান, তারিখ এবং স্বাক্ষর সহ যাবতীয় তথ্যাবলী দেওয়া থাকে অথবা না দেওয়া থাকে এবং সেটি হারিয়ে যায় তবে তাকে বলা হয় লস্ট চেক বা হারিয়ে যাওয়া চেক।

৮. ব্ল্যাংক চেক বা ফাঁকা চেক

এধরনের চেক বই সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সিনেমা কিংবা নাটকের ব্ল্যাক চেক শব্দটি অনেক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সম্পূর্ণ তথ্য এবং স্বাক্ষর গুলো প্রদান করার পর টাকার ঘরটি ফাঁকা রাখলে সেটাকে বলা হয় ব্ল্যাঙ্ক চেক।

চেক লিখার নিয়ম (ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ)

চেক কত প্রকার সেই সম্পর্কে তো সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে আপনাদের। এবার চলুন একটি ব্যাংক চেক কিভাবে লিখবেন সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিয়ে নেই:

• সবার আগে যে ব্যাংক হতে অর্থ উত্তোলন করবেন সে ব্যাংকের নাম লিখতে হবে। ব্যাংকের শাখার নাম লিখতে শুদ্ধ বানান ব্যবহার করুন।

• যদিও আধুনিককালের ডিজিটাল চেক গুলোতে একাউন্টের নম্বর প্রিন্ট করা অবস্থায় থাকে তবুও এটি একবার যাচাই করে নেবেন।

• আপনি যে তারিখে টাকা উত্তোলন করছেন ঠিক সেই তারিখে সেখানে প্রদান করবেন।

• ব্যাংক চেক লিখার নিয়মে টাকার পরিমাণ কথায় এবং অংকে উভয় ভাবে লিখতে হয়। এই পার্টটি ভালোভাবে লিখুন কারণ টাকার অংকে ভূল হলে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।

• সর্বশেষ আপনাকে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যেটি ব্যবহার করেছিলেন সেটি এখানে হুবহু ব্যবহার করুন।

ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম গুলি খুবই সহজ।

কি কি কারণে চেক প্রত্যাখিত হয় কিংবা ডিজঅনার হয়

অনেক সময় বাসা থেকে চেক লিখে নিয়ে গেলে কিংবা কেউ আপনাকে সেটি প্রদান করলে ব্যাংকে অনেক সময় এরকম ঝামেলায় পড়তে হয়। বিভিন্ন ভুলের কারণে কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে অস্বীকার করে। এরকমই কিছু কারণ আপনাদের জন্য নিচে উপস্থাপন করা হলো।

• আপনি চেক বইতে যে পরিমাণ টাকার অংক বসিয়েছেন সেটা যদি একাউন্টে না থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ আপনাকে টাকা দিতে পারবে না।

• চেকে অবশ্যই আমানতকারী স্বাক্ষর থাকতে হবে এবং স্পষ্ট থাকতে হবে। সেটা যদি সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝা না যায় তাহলে আপনার ব্যাংক প্রত্যাখ চেক প্রত্যাখিত হবে।

• আবার চেক বইয়ের স্বাক্ষর এবং ব্যাংকের একাউন্ট খোলার সময় যে স্বাক্ষর প্রদান করেছিলেন এই দুটি যদি না মিলে তাহলে আপনাকে টাকা প্রদান করা হবে না।

• চেকের তারিখ এবং টাকার পরিমান অস্পষ্ট থাকলে কিংবা না উল্লেখ করলে একটি গৃহীত হবে না।

• যদি কোন কারনে নির্ধারিত তারিখের অনেক পরে ব্যাংকে গিয়ে অর্থ উত্তোলন করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না এটি বাসি চেক হিসেবে গণ্য হবে।

• আমানতকারী যদি একই ব্যাংকে একাধিক ধরনের হিসাব থাকে তাহলে একটি একাউন্টের চেক দিয়ে অন্য একাউন্টে টাকা উত্তোলন করা যাবে না।

• একটি চেকে যদি বেশি পরিমাণে কাটাকাটি থাকে এবং সংশোধন করে লেখার পর নমুনা স্বাক্ষর না থাকে তাহলে সেটি প্রত্যাখ্যাত হবেন।

• কোন কারনে ব্যাংক চেকের কিছু অংশ ছিড়ে গেলে কিংবা তথ্য গুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সেটি প্রত্যাখিত হতে পারে।

• এটা যদি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট হয় সে ক্ষেত্রে সকল জীবিত আমানতকারী স্বাক্ষর না থাকলে চেক গৃহীত হবে না।

• আমানতকারীর মস্তিষ্ক যদি বিকৃত হয় এবং ব্যাংকে যদি উক্ত নোটিশ প্রদান হয় তাহলে তার অ্যাকাউন্ট হতে অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম পালন করা হবে। এক্ষেত্রে সাধারন চেকের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।

• ব্যাংক চেক হারিয়ে গেছে এই মর্মে যদি একাউন্টেরধারী জিডি করে এবং সেটির একটি কপি ব্যাংকের জমা প্রদান করে তাহলে হারানো চেক গুলোতে কোন অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ এবং ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এদলিলটি নিজে ছাড়া অন্য অন্য কাউকে যত্রতত্র ব্যবহার করতে দেবেন না। কারণ একটা ফাঁকা চেক নিয়ে যে কেউ আপনাকে হারায়নি করতে পারে। সেই সাথে প্রতারণা করে হাতে নিতে পারে আপনার অর্থ।

ইউটিউবে ১ হাজার ভিউ হলে কত টাকা ইনকাম হয়, বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ব্যাংক চেক কত প্রকার এবং বৈশিষ্ট্যসহ যাবতীয় তথ্য জেনে নিন

আপডেট সময় : ১১:৪৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪

ব্যাংক চেক কত প্রকার সেটা জানার আগে আরো কিছু বিষয়াদি আপনাদের অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন। চেক হলো এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল যেটি যে কাউকে প্রদান করা যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানকেও হস্তান্তর করা যায়। আবার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য একজন আমানতকারী এই দলিলটি ব্যবহার করে থাকে। যদিও বর্তমানে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের যুগ তবুও ব্যাপক হারে চেকের ব্যবহার পরিলক্ষিত করা যায়।

সাধারণ সজ্ঞা মতে একটি ব্যাংক তার গ্রাহককে টাকা উত্তোলনের জন্য শর্তহীন আদেশপত্র প্রদান করে থাকে তার নামই হচ্ছে চেক। এব্যাপারে আইন হচ্ছে, যদি সকল শর্ত ঠিক থাকে তবে চাহিদা মাত্র ব্যাংক টাকার প্রদানের জন্য বাধ্য থাকবে। সাধারণভাবে হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা, গ্রাহকের স্বাক্ষর এবং অন্যান্য তথ্য গুলি স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকলেই ব্যাংক সেটির পরিবর্তে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য।

বিভিন্ন অর্থনীতি বিদদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি হলো এমন একটি দলিল যা এর প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত থাকে এবং এর মাধ্যমে কোন ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ উত্তোলনের জন্য অনুমতি প্রদান করেন।

ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি

আমি আপনাদের সাথে এসম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি বিষয় গুলি আলোচনা করার চেষ্টা করছি। যাতে করে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর আপনাদের অন্য কোন তথ্য জানার বাকি না থাকে। ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার আগে এর বৈশিষ্ট্য গুলি ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত। এতে করেও আপনি সম্পূর্ণ ধারণা পাবেন। সারা বিশ্বজুড়ে একটি ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য তালিকা আকারে নিচে আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলো।

• এই কাগজটি অবশ্যই লিখিত এবং ছাপানো অবস্থায় থাকবে। শুধুমাত্র ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটি আপনাকে প্রদান করতে পারবে।

• যথাযথ আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। এছাড়া চেকে সর্বমোট পক্ষ থাকবে ৩ টি।

• ব্যাংক চেকের বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটির হস্তান্তরযোগ্যতা। অর্থাৎ এর মালিক চাইলে যে কোন ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কাউকে এটি প্রদান করতে পারবেন। যাকে প্রদান করা হবে তিনিও একই নিয়মে প্রতিষ্ঠান হতে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। এজন্য দলিলে অবশ্যই আমানতকারীর স্বাক্ষর এবং অন্যান্য তথ্যাবলি থাকতে হবে।

• একটি চেকের মাধ্যমে শুধু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা যাবে এবং দলিলে অবশ্যই তারিখ উল্লেখ করা থাকবে।

• চেক একটি শর্তহীন দলিল। চাহিবা মাত্র ব্যাংক অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে।

• এতে দাগ কাটার সুযোগ আছে অর্থাৎ কোন ভুল হলে সেটা কেটে দিয়ে পুনরায় লেখার নিয়ম রয়েছে।

• অর্থের পরিমাণ কথা এবং অংকে উভয় ভাবে লিখতে হবে।

ব্যাংক চেক কত প্রকার

দিন দিন সভ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে লেনদেনের ধরন। বর্তমান বিশ্বের গ্রাহকদের বিভিন্নমুখী প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে একটি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের চেক ইস্যু করতে পারে। সেগুলো প্রকারভেদ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. বাহক চেক (বেয়ারার চেক)

কোন ব্যক্তি কিংবা আমানতকারী সরাসরি ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে নিজে অথবা বাহক হয়ে কোন অ্যাকাউন্ট হতে সরাসরি অর্থ উত্তোলন করতে পারে এমন ধরনের যে কি হচ্ছে।

২. অর্ডার চেক

যদি আমানতকারী অথবা তার আদেশ অনুযায়ী অন্য কাউকে তার একাউন্টে অর্থ প্রদান করতে হয় চেকের মাধ্যমে তাহলে সেটিকে বলা হয় অর্ডার চেক।

৩. দাগ কাটা চেক

উপরের বাহক এবং অর্ডার চেকের আড়াআড়িভাবে দাগ দিয়ে ক্রসের মত করে দিলে সেটাকে বলা হয় ক্রস চেক বা দাগ কাটা চেক।

এধরনের চেকের আবার ২ টি ভাগ রয়েছে একটি হচ্ছে সাধারণভাবে দাগ কাটা এবং অপরটি হচ্ছে বিশেষভাবে দাগ কাটা।

৪. পূর্বের তারিখের চেক

যদি কোন চেকের তারিখ বর্তমান সময় হতে পূর্বের কোন তারিখ দেওয়া হয় তাহলে সেটাকে বলা হয় পূর্বে তারিখের চেক।

৫. পরের তারিখের চেক

ভবিষ্যতে অর্থ উত্তোলনের জন্য যদি কোন সময় থেকে পরের তারিখ দেওয়া হয় তাহলে তাকে বলা হয় পোস্টডেটেড বা পরের তারিখের চেক।

৬. স্টিল বা বাসি চেক

একটি চেক ইস্যু বা লেখার পর যদি কমপক্ষে ৬ মাস পরে সেটি দিয়ে ব্যাংকে অর্থ উত্তোলনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তবে তাকে বলা হয় বাঁশি চেক। তবে ব্যাংক এই ধরনের চেকের বিপরীতে ব্যাংক কোন অর্থ প্রদান করে না।

৭. হারিয়ে যাওয়া চেক

যদি কোন চেকে নাম, টাকার পরিমান, তারিখ এবং স্বাক্ষর সহ যাবতীয় তথ্যাবলী দেওয়া থাকে অথবা না দেওয়া থাকে এবং সেটি হারিয়ে যায় তবে তাকে বলা হয় লস্ট চেক বা হারিয়ে যাওয়া চেক।

৮. ব্ল্যাংক চেক বা ফাঁকা চেক

এধরনের চেক বই সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সিনেমা কিংবা নাটকের ব্ল্যাক চেক শব্দটি অনেক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সম্পূর্ণ তথ্য এবং স্বাক্ষর গুলো প্রদান করার পর টাকার ঘরটি ফাঁকা রাখলে সেটাকে বলা হয় ব্ল্যাঙ্ক চেক।

চেক লিখার নিয়ম (ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ)

চেক কত প্রকার সেই সম্পর্কে তো সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে আপনাদের। এবার চলুন একটি ব্যাংক চেক কিভাবে লিখবেন সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিয়ে নেই:

• সবার আগে যে ব্যাংক হতে অর্থ উত্তোলন করবেন সে ব্যাংকের নাম লিখতে হবে। ব্যাংকের শাখার নাম লিখতে শুদ্ধ বানান ব্যবহার করুন।

• যদিও আধুনিককালের ডিজিটাল চেক গুলোতে একাউন্টের নম্বর প্রিন্ট করা অবস্থায় থাকে তবুও এটি একবার যাচাই করে নেবেন।

• আপনি যে তারিখে টাকা উত্তোলন করছেন ঠিক সেই তারিখে সেখানে প্রদান করবেন।

• ব্যাংক চেক লিখার নিয়মে টাকার পরিমাণ কথায় এবং অংকে উভয় ভাবে লিখতে হয়। এই পার্টটি ভালোভাবে লিখুন কারণ টাকার অংকে ভূল হলে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।

• সর্বশেষ আপনাকে স্বাক্ষর প্রদান করতে হবে। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যেটি ব্যবহার করেছিলেন সেটি এখানে হুবহু ব্যবহার করুন।

ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম গুলি খুবই সহজ।

কি কি কারণে চেক প্রত্যাখিত হয় কিংবা ডিজঅনার হয়

অনেক সময় বাসা থেকে চেক লিখে নিয়ে গেলে কিংবা কেউ আপনাকে সেটি প্রদান করলে ব্যাংকে অনেক সময় এরকম ঝামেলায় পড়তে হয়। বিভিন্ন ভুলের কারণে কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে অস্বীকার করে। এরকমই কিছু কারণ আপনাদের জন্য নিচে উপস্থাপন করা হলো।

• আপনি চেক বইতে যে পরিমাণ টাকার অংক বসিয়েছেন সেটা যদি একাউন্টে না থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ আপনাকে টাকা দিতে পারবে না।

• চেকে অবশ্যই আমানতকারী স্বাক্ষর থাকতে হবে এবং স্পষ্ট থাকতে হবে। সেটা যদি সাধারণ দৃষ্টিতে বোঝা না যায় তাহলে আপনার ব্যাংক প্রত্যাখ চেক প্রত্যাখিত হবে।

• আবার চেক বইয়ের স্বাক্ষর এবং ব্যাংকের একাউন্ট খোলার সময় যে স্বাক্ষর প্রদান করেছিলেন এই দুটি যদি না মিলে তাহলে আপনাকে টাকা প্রদান করা হবে না।

• চেকের তারিখ এবং টাকার পরিমান অস্পষ্ট থাকলে কিংবা না উল্লেখ করলে একটি গৃহীত হবে না।

• যদি কোন কারনে নির্ধারিত তারিখের অনেক পরে ব্যাংকে গিয়ে অর্থ উত্তোলন করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না এটি বাসি চেক হিসেবে গণ্য হবে।

• আমানতকারী যদি একই ব্যাংকে একাধিক ধরনের হিসাব থাকে তাহলে একটি একাউন্টের চেক দিয়ে অন্য একাউন্টে টাকা উত্তোলন করা যাবে না।

• একটি চেকে যদি বেশি পরিমাণে কাটাকাটি থাকে এবং সংশোধন করে লেখার পর নমুনা স্বাক্ষর না থাকে তাহলে সেটি প্রত্যাখ্যাত হবেন।

• কোন কারনে ব্যাংক চেকের কিছু অংশ ছিড়ে গেলে কিংবা তথ্য গুলি অস্পষ্ট হয়ে গেলে সেটি প্রত্যাখিত হতে পারে।

• এটা যদি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট হয় সে ক্ষেত্রে সকল জীবিত আমানতকারী স্বাক্ষর না থাকলে চেক গৃহীত হবে না।

• আমানতকারীর মস্তিষ্ক যদি বিকৃত হয় এবং ব্যাংকে যদি উক্ত নোটিশ প্রদান হয় তাহলে তার অ্যাকাউন্ট হতে অর্থ সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়ম পালন করা হবে। এক্ষেত্রে সাধারন চেকের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন না।

• ব্যাংক চেক হারিয়ে গেছে এই মর্মে যদি একাউন্টেরধারী জিডি করে এবং সেটির একটি কপি ব্যাংকের জমা প্রদান করে তাহলে হারানো চেক গুলোতে কোন অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি ব্যাংক চেকের প্রকারভেদ এবং ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এদলিলটি নিজে ছাড়া অন্য অন্য কাউকে যত্রতত্র ব্যবহার করতে দেবেন না। কারণ একটা ফাঁকা চেক নিয়ে যে কেউ আপনাকে হারায়নি করতে পারে। সেই সাথে প্রতারণা করে হাতে নিতে পারে আপনার অর্থ।

ইউটিউবে ১ হাজার ভিউ হলে কত টাকা ইনকাম হয়, বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।