প্রাপ্তবয়স্ক লোকেরাও এক মুহূর্ত মোবাইল ছাড়া চলতে পারে না। তার জন্য শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্কদেরও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ বর্তমান যুগে শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্করা প্রায় সকলেই সমান ভাবে স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার কারণে তৈরি হচ্ছে মানসিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।
বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ বাচ্চারাই স্কুল এবং লেখাপড়ার সময় বাদে বাকি সারাদিন কাটে মোবাইলের ব্যস্ততায়। কার্টুন খেলা, গেম খেলা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি ছাড়া যেন এক মুহূর্ত তারা থাকতে পারেনা। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে কমছে পড়াশোনায় মনোযোগ। তাইতো বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি কমানোর উপায় গুলি নিয়ে আজকে আমি হাজির হয়েছে। তাই পুরো আর্টিকেল টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রথমে শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণ খুঁজে বের করুন
প্রতিনিয়ত স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ ব্যবহার করা শারীরিক এবং মানসিক উভয়েরই ক্ষতির জন্য দায়ী। অবশ্য করোনাকালীন সময় থেকে সকল বয়সের মানুষদের মোবাইলের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেটি বর্তমান সময়ে পুরোপুরি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
কিন্তু শিশুদের মোবাইল আসক্তির কারণ কি?
লেখাপড়ার বাইরে প্রত্যেকের শিশুরই কিছু না কিছি বিনোদনের দরকার রয়েছে। সেটি হতে পারে মাঠে খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া কিংবা যেকোনো ধরনের কার্যকলাপ। বর্তমান সময়ে সকল শিশুরাই ঘরে বসে মোবাইল চালানোর অভ্যাসে এতটাই ডুবে থাকে যে বাইরে খেলাধুলার কথা এদের মাথায়ই থাকে না।
অতিরিক্ত টিভি, মোবাইল এবং গেম খেললে আমাদের মস্তিষ্কেে কোষ থেকে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ক্ষরণ হয়। এই নিঃসরণ হওয়ার পদার্থটিকে বলা হয় ডোপামিন।
এই পদার্থটি বিভিন্ন রকম ভালো রাখার অনুভূতি আমাদেরকে প্রদান করে থাকে। কোন ব্যক্তি যখন মোবাইল কিংবা এই ধরনের ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে থাকে তখন ডোপামিন ক্ষরণ হয় এবং ব্যবহারকারীও ধীরে ধীরে ডিভাইসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই যথাসম্ভব ঘরের মধ্যে এ ধরনের মাল্টিমিডিয়া ডিভাইস কম ব্যবহার করুন।
শিশুদের মোবাইল আসক্তি দূর করার জন্য বিনোদনের অন্যান্য উৎস তৈরি করুন
আপনি যদি তাদেরকে বুঝাতে পারেন বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করা, গল্পের বই পড়া, বন্ধুদের সাথে মাঠে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে আস্তে আস্তে সে পরিবর্তন হতে পারে।
পরিবারের সবাই মিলে যা করতে পারেন
বর্তমান যুগে অবসর সময়ে বাসার সবাই হয় মোবাইল ব্যবহার করে না হলে টিভি দেখে। বড়দের সাথে সাথে শিশুরাও এই ধরনের কাজে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
কিন্তু আপনি যদি বাসায় বই পড়া কিংবা অন্যান্য কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করেন তাহলে আপনার দেখাদেখি ছোট্ট শিশুটিও তাই করবে। তাই একজন পরিবারের অভিভাবক হিসেবে শিশুদের সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
শিশুদের হাতে মোবাইল দেওয়া
অনেক সময় বাচ্চারা কান্না করলে কিংবা খেতে না চাইলে আমরা হাতে একটি মোবাইল ধরে দেই। এতে করে পরবর্তী সময়ে মোবাইলের নেশায় আসক্ত হয়ে বারবার না খাওয়া এবং কান্না করার মত পরিস্থিতি তৈরি করবে।
তাই সবকিছুরই একটি পজিটিভ সমাধান বের করুন এবং বাচ্চাদের মোবাইল হতে দূরে রাখুন।
বই পড়ে পড়ে বাচ্চাদের গল্প শুনান
যখন কিনা ঘরে ঘরে এধরনের স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ছিল না তখন বাচ্চাদের বিনোদনের একটি অন্যতম উৎস ছিল গল্পের বই পড়া। আপনার যদি অবসর সময় থাকে তাহলে শিশুদেরকে নানা রকম উৎসাহ মূলক গল্পের বই পড়ে শুনান। এতে করে তারও মনোভাব পরিবর্তিত হবে।
মোবাইল আসক্তি কমানোর জন্য শিশুদের আগ্রহ বোঝার চেষ্টা করুন
প্রতিটি শিশুরই কিছু-না-কিছুর প্রতি আলাদা একটি ঝোঁক থাকে। যেমন কেউ কেউ গান গেতে পছন্দ করে, কেও ছবি আঁকতে পছন্দ করে, ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে, নির্দিষ্ট কোন বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আসক্তি থাকে অথবা কারিগরি জিনিস গুলোর প্রতি আলাদা আগ্রহ থেকে।
আপনি যদি শিশুর এই মনোভাবটি বুঝতে পারেন তাহলে তাকে সে ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলুন।
আগ্রহ বোঝার জন্য তার সামনে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড গুলো উপস্থাপন করুন। খেয়াল রাখুন কোনটির প্রতি তার পছন্দ প্রকাশিত হচ্ছে। তারপর সেই অনুযায়ী তাকে পরিচালিত করুন দেখবেন বাচ্চার মোবাইল আসক্তি দূর হয়ে গিয়েছে।
খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া
মাঠে খেলাধুলা করা শারীরিক এবং মানসিক উভয়ই বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে করে শিশুদের মনের ভিতরে নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে উঠে যা পরবর্তী কর্মজীবনে তাকে অনেক ধাপ এগিয়ে নেয়।
বিকেলবেলা বা দিনের যে কোন সময় তাকে মাঠে খেলাধুলা করতে নিয়ে যান।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে শেখান
লেখাপড়া করে চাকরি করা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের পেশা রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্রিকেটার, ফুটবলার, টেনিস বল খেলোয়াড়, জিমন্যাস্টিক সাঁতারু হওয়া ইত্যাদি।
আপনার বাচ্চার উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে চাইলে এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিন। ঢাকা সহ সারা বাংলাদেশে এই ধরনের খেলাধুলা কিংবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার মানসিক বিকাশের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সুনিশ্চিত হবে।
সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলা
বর্তমান যুগে অনেক শিশুরা রয়েছে যারা কিনা মোবাইলে এতই আসক্ত হয়ে পড়ছে যে পরিবারকে আমরা সমাজে ভালোভাবে সময় দিতে পারেনা কিংবা মিশতে পারে না।
তাই পরিবারের সবাই মিলে মাঝে মাঝে আড্ডা দিন কিংবা কোথাও ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে আপনার সন্তানকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিন এবং কথা বলার অভ্যাস করে তুলুন।
সন্তানের মোবাইল আসক্তি দূর করার জন্য উপরিক্ত উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। কিন্তু এতে করে যদি কোনরকম ভালো ফলাফল না আসে তাকে সরাসরি বোঝানোর চেষ্টা করুন। কারণ ছোট থেকেই মনসংযোগ দেওয়ার অভ্যাস করে না তুললে ভবিষ্যতে উন্নত স্মৃতিশক্তি গঠিত হবে না।