ক্রেডিট কার্ড কি এবং সুবিধা-অসুবিধা সহ যাবতীয় তথ্য জানুন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪০ বার পড়া হয়েছে

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বর্তমান ব্যাংকিং খাতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাইতো অনেকেই জানতে চেয়েছেন ক্রেডিট কার্ড কি এবং এটি কিভাবে পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। মূলত এটি হলো এমন একটি কার্ড যেটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। যদিও এটি প্লাস্টিক কিংবা মেটালের তৈরি এটা দিয়ে যাবতীয় লেনদেন কেনাকাটা পেমেন্ট ইত্যাদি কার্য গুলি সম্পাদন করা যায়।

শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি এবং নিয়মিত ভালো অর্থ উপার্জন করেন এমন ব্যক্তিদেরকেই এধরনের কার্ড অফার করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তাই কার্ড নেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড কি?

যদি আপনি ব্যাংক একাউন্ট খুলে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেটির সাথে একটি চেক বই প্রয়োজন হয়। কারণ এই চেক বইয়ের মাধ্যমে আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল ব্যাংকিং এর যুগে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এটিএম অথবা অন্যান্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

ডেবিট কার্ডের মতোই ক্রেডিট কার্ডেও একই কারণে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এটার একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সেটি হচ্ছে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যদি কোন টাকা না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যেমন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট লোন সুবিধা পাবেন।

ধরুন আপনি কোথাও কেনাকাটা করতে গিয়েছেন, একটি জিনিস কিনতে চান কিন্তু আপনার ব্যাংকে কোন টাকা নেই। যদি আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে সেটির মাধ্যমে আপনি হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ ইনস্ট্যান্ট লোন হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন।

পরবর্তীতে আপনি যখন ব্যাংকে টাকা ডিপোজিট করবেন তখন সেখান থেকে ক্রেডিট কার্ডের লোনের টাকা গুলি কেটে নেওয়া হবে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

বহুল ব্যবহৃত এই কার্ডের অনেক সুবিধা রয়েছে যেগুলো নিম্নে আমি আপনাদের সাথে উপস্থাপন করলাম।

• আপনি এই পদ্ধতির মাধ্যমে যত কেনাকাটা এবং খরচ করবেন তার ওপরে পয়েন্ট পাবেন এবং ক্যাশব্যাক পাবেন। উপার্জিত পয়েন্ট গুলিতে আপনি অন্যান্য কেনাকাটার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

• বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিস্তিতে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি সাধারণভাবে কোন পণ্য কিস্তিতে নিতে চান তাহলে ভোটার আইডি কার্ড সহ অনেক ধরনের কাগজপত্র এবং তথ্য প্রদান করতে হয়। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থাকলে এই ধরনের ঝামেলা নেই।

• বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া ইত্যাদি কেনার সময় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেটির অর্থ পরিশোধ করলে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

• সাধারণ ডেবিট কিংবা ভিসা কার্ডের চাইতে এই কার্ডে নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক ভালো।

• আপনি যখন এই কার্ড ব্যবহার করে ইনস্ট্যান্ট লোন নিবেন সেটি নির্ধারিত সময় সাধারণত ২ মাস পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ফ্রি ভাবে পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলে লোনের উপর ইন্টারেস্ট কেটে নেওয়া হয়।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

সুবিধার পাশাপাশি এটির বেশ অসুবিধা রয়েছে। চলুন সেগুলোরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

• যেহেতু এটির মাধ্যমে যখন তখন ঋণ সুবিধা পাওয়া যায় তাই বাজেটের অতিরিক্ত কেনাকাটা হয়ে যায়। আর সামর্থ্যের অতিরিক্ত খরচ করে ফেলা মানে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা।

• লোন নেওয়ার পর সময়মতো সেটি পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকে। সেই সুদের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন সুদের পরিমাণ আসল টাকার সমান হয়ে যায়।

• এটি ব্যবহার করে যদি আপনি কোন ইনস্টলমেন্ট অথবা কিস্তি গ্রহণ করেন এবং সেটি পরিশোধ করতে দেরি করেন তাহলে পয়েন্ট কমে যায়। যার কারণে ভবিষ্যতে লোন উঠানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

• আপনি যদি এটি ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেন কিন্তু লোন না নিয়ে ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য

অনেকেই হয়তো নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলবেন যার কারণে জানতে চেয়েছেন এই দুই ধরনের কার্ডের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা। অবশ্যই পার্থক্য আছে এবং সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

• আপনার ব্যালেন্সে কোন টাকা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ব্যাংকে টাকা না থাকলে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার করে কোন টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না।

• আপনি যদি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কোন পেমেন্ট করেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে টাকা না থাকলেও আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টে টাকা ডিপোজিট করলে সেখান থেকে বাকি টাকা হবে।

• ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি অনলাইন থেকে কিস্তিতে কোন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি যে কোন জায়গা হতে কিস্তিতে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কি

এর জন্য প্রথমেই আপনার পছন্দের ব্যাংকে একটি একাউন্ট করতে হবে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করতে হবে।

সেই সাথে আপনার প্রতি মাসের বেতনের পরিমাণ, এমনকি বিগত ৬ মাসের বেতনের স্টেটমেন্ট ইত্যাদি তথ্য চাওয়া হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ডাক্তার উকিল, বড় কোন ব্যবসায়ী অথবা ভালো বেতনের চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া অত্যন্ত সহজ।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপনাকে কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য অফার করা হবে। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে সাধারণভাবে যে কাগজপত্র গুলি লাগে সেগুলো তো অবশ্যই সাবমিট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি ভবিষ্যতে এই কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন কিনা অর্থাৎ ঠিকমতো বিল পরিশোধ করতে পারবেন কিনা সেটা যাচাই করে আপনাকে এটি প্রদান করা হবে। তাই পেশাগত দিক ভালো ভাবে যাচাই করা হয়।

যদি আপনি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে বছরে অন্তত ১০ লাখ টাকার লেনদেন হতে হবে। আর যদি আপনি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার বেশি বেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে চাকরির বয়স ৬ মাসের কম হলে চলবে না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ড কি এবং ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা হয়েছে। কিন্তু এই কার্ডের একটি ইন্টারন্যাশনাল ভ্যারিয়েন্ট আছে। অর্থাৎ এটা ব্যবহার করে আপনি দেশের বাইরেও যে কোন কান্ট্রিতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে কার্ডটি নেওয়ার সময় অবশ্যই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে হবে। কারণ সিঙ্গেল কারেন্সি কার্ডে আপনি যত টাকাই ডিপোজিট করেন না কেন সেটা দিয়ে বাইরের দেশেতে টাকা তুলতে পারবেন না।

কার্ড ব্যবহার করতে কত চার্জ প্রদান করতে হয়

সব ব্যাংকের সার্ভিস গুলোর চার্জ একই রকম নয়। তাই আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট ওপেন করবেন এবং কার্ড গ্রহণ করবেন সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অথবা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসকল তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায়

যেহেতু এই কার্ডের মাধ্যমে আমাদের জীবনে অহেতুক কিছু ব্যয় এবং অর্থ অপচয় হয় তাই অনেকেই এটি বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। কারণ ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপে গেলে এটি বন্ধ করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

যদি আপনি এই ধরনের সার্ভিস বন্ধ করতে চান তাহলে একটি সহজ উপায় আছে। আপনার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের কল দিয়ে ওই কার্ডটি বাতিল করার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। আর যদি ব্যাংক আপনার নিকটে অবস্থিত হয় তাহলে সেখানে গিয়ে একাউন্ট সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলেই বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা করবেন।

তবে কার্ড বন্ধ করার অনুরোধ করার আগে অবশ্যই বকেয়া অর্থ বা বিল পরিশোধ করতে হবে।

ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার

বর্তমান বাংলাদেশে ৪০ টিরও অধিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এই ধরনের সেবা দিচ্ছে। যাদের মধ্যে প্রায় সবাই ভিসা এবং মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে সার্ভিস দিয়ে থাকে। এর বাইরেও বেশ কয়েক ধরনের কার্ড সেবা রয়েছে। তবে আপনার কি কি কাজে এটা ব্যবহার করবেন ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে সেটি আলোচনা করলে তিনি আপনাকে নির্ধারিত সেবা প্রদান করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

বিভিন্ন ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে বাংলাদেশ এই ধরনের সেবার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাজারে অনেক বড় হচ্ছে। প্রয়োজন এবং সচেতনতার উপর ভিত্তি করে শিথিল হচ্ছে বিভিন্ন নিয়ম কানুন। তাই এই বিশেষ সার্ভিসটি গ্রহণ করার আগে ক্রেডিট কার্ড কি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী ছিল। আশা করি এখন আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হবে। তবে মনে রাখবেন প্রয়োজন না হলে এই ধরনের সার্ভিস গ্রহণ না করাই ভালো।

বিষন্নতা থেকে মুক্তির উপায় জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ক্রেডিট কার্ড কি এবং সুবিধা-অসুবিধা সহ যাবতীয় তথ্য জানুন

আপডেট সময় : ০৮:৩৩:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বর্তমান ব্যাংকিং খাতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাইতো অনেকেই জানতে চেয়েছেন ক্রেডিট কার্ড কি এবং এটি কিভাবে পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে। মূলত এটি হলো এমন একটি কার্ড যেটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। যদিও এটি প্লাস্টিক কিংবা মেটালের তৈরি এটা দিয়ে যাবতীয় লেনদেন কেনাকাটা পেমেন্ট ইত্যাদি কার্য গুলি সম্পাদন করা যায়।

শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি এবং নিয়মিত ভালো অর্থ উপার্জন করেন এমন ব্যক্তিদেরকেই এধরনের কার্ড অফার করা হয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তাই কার্ড নেওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড কি?

যদি আপনি ব্যাংক একাউন্ট খুলে থাকেন তাহলে অবশ্যই সেটির সাথে একটি চেক বই প্রয়োজন হয়। কারণ এই চেক বইয়ের মাধ্যমে আপনি টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল ব্যাংকিং এর যুগে টাকা উত্তোলনের জন্য একটি ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে আপনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এটিএম অথবা অন্যান্য ব্যাংকের এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।

ডেবিট কার্ডের মতোই ক্রেডিট কার্ডেও একই কারণে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এটার একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সেটি হচ্ছে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যদি কোন টাকা না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যেমন ৫০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনস্ট্যান্ট লোন সুবিধা পাবেন।

ধরুন আপনি কোথাও কেনাকাটা করতে গিয়েছেন, একটি জিনিস কিনতে চান কিন্তু আপনার ব্যাংকে কোন টাকা নেই। যদি আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে সেটির মাধ্যমে আপনি হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ ইনস্ট্যান্ট লোন হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন।

পরবর্তীতে আপনি যখন ব্যাংকে টাকা ডিপোজিট করবেন তখন সেখান থেকে ক্রেডিট কার্ডের লোনের টাকা গুলি কেটে নেওয়া হবে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা

বহুল ব্যবহৃত এই কার্ডের অনেক সুবিধা রয়েছে যেগুলো নিম্নে আমি আপনাদের সাথে উপস্থাপন করলাম।

• আপনি এই পদ্ধতির মাধ্যমে যত কেনাকাটা এবং খরচ করবেন তার ওপরে পয়েন্ট পাবেন এবং ক্যাশব্যাক পাবেন। উপার্জিত পয়েন্ট গুলিতে আপনি অন্যান্য কেনাকাটার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

• বিভিন্ন ধরনের পণ্য কিস্তিতে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি সাধারণভাবে কোন পণ্য কিস্তিতে নিতে চান তাহলে ভোটার আইডি কার্ড সহ অনেক ধরনের কাগজপত্র এবং তথ্য প্রদান করতে হয়। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড থাকলে এই ধরনের ঝামেলা নেই।

• বিমান ভাড়া, হোটেল ভাড়া ইত্যাদি কেনার সময় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সেটির অর্থ পরিশোধ করলে আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

• সাধারণ ডেবিট কিংবা ভিসা কার্ডের চাইতে এই কার্ডে নিরাপত্তা বা সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক ভালো।

• আপনি যখন এই কার্ড ব্যবহার করে ইনস্ট্যান্ট লোন নিবেন সেটি নির্ধারিত সময় সাধারণত ২ মাস পর্যন্ত ইন্টারেস্ট ফ্রি ভাবে পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলে লোনের উপর ইন্টারেস্ট কেটে নেওয়া হয়।

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা

সুবিধার পাশাপাশি এটির বেশ অসুবিধা রয়েছে। চলুন সেগুলোরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

• যেহেতু এটির মাধ্যমে যখন তখন ঋণ সুবিধা পাওয়া যায় তাই বাজেটের অতিরিক্ত কেনাকাটা হয়ে যায়। আর সামর্থ্যের অতিরিক্ত খরচ করে ফেলা মানে অতিরিক্ত ঋণের বোঝা।

• লোন নেওয়ার পর সময়মতো সেটি পরিশোধ করতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকে। সেই সুদের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন সুদের পরিমাণ আসল টাকার সমান হয়ে যায়।

• এটি ব্যবহার করে যদি আপনি কোন ইনস্টলমেন্ট অথবা কিস্তি গ্রহণ করেন এবং সেটি পরিশোধ করতে দেরি করেন তাহলে পয়েন্ট কমে যায়। যার কারণে ভবিষ্যতে লোন উঠানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

• আপনি যদি এটি ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেন কিন্তু লোন না নিয়ে ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হয়।

ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য

অনেকেই হয়তো নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলবেন যার কারণে জানতে চেয়েছেন এই দুই ধরনের কার্ডের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা। অবশ্যই পার্থক্য আছে এবং সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।

• আপনার ব্যালেন্সে কোন টাকা না থাকলেও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা খরচ করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ব্যাংকে টাকা না থাকলে ডেবিট কার্ডের ব্যবহার করে কোন টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না।

• আপনি যদি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কোন পেমেন্ট করেন তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে টাকা না থাকলেও আপনার পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টে টাকা ডিপোজিট করলে সেখান থেকে বাকি টাকা হবে।

• ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি অনলাইন থেকে কিস্তিতে কোন পণ্য ক্রয় করতে পারবেন না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আপনি যে কোন জায়গা হতে কিস্তিতে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা কি

এর জন্য প্রথমেই আপনার পছন্দের ব্যাংকে একটি একাউন্ট করতে হবে। ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা অ্যাকাউন্টে ডিপোজিট করতে হবে।

সেই সাথে আপনার প্রতি মাসের বেতনের পরিমাণ, এমনকি বিগত ৬ মাসের বেতনের স্টেটমেন্ট ইত্যাদি তথ্য চাওয়া হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ডাক্তার উকিল, বড় কোন ব্যবসায়ী অথবা ভালো বেতনের চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে ক্রেডিট কার্ড পাওয়া অত্যন্ত সহজ।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপনাকে কার্ড সেবা নেওয়ার জন্য অফার করা হবে। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে সাধারণভাবে যে কাগজপত্র গুলি লাগে সেগুলো তো অবশ্যই সাবমিট করতে হবে। অর্থাৎ আপনি ভবিষ্যতে এই কার্ডটি ব্যবহার করতে পারবেন কিনা অর্থাৎ ঠিকমতো বিল পরিশোধ করতে পারবেন কিনা সেটা যাচাই করে আপনাকে এটি প্রদান করা হবে। তাই পেশাগত দিক ভালো ভাবে যাচাই করা হয়।

যদি আপনি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে বছরে অন্তত ১০ লাখ টাকার লেনদেন হতে হবে। আর যদি আপনি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকার বেশি বেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে চাকরির বয়স ৬ মাসের কম হলে চলবে না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড

ক্রেডিট কার্ড কি এবং ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা হয়েছে। কিন্তু এই কার্ডের একটি ইন্টারন্যাশনাল ভ্যারিয়েন্ট আছে। অর্থাৎ এটা ব্যবহার করে আপনি দেশের বাইরেও যে কোন কান্ট্রিতে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে কার্ডটি নেওয়ার সময় অবশ্যই ডুয়েল কারেন্সি কার্ড নিতে হবে। কারণ সিঙ্গেল কারেন্সি কার্ডে আপনি যত টাকাই ডিপোজিট করেন না কেন সেটা দিয়ে বাইরের দেশেতে টাকা তুলতে পারবেন না।

কার্ড ব্যবহার করতে কত চার্জ প্রদান করতে হয়

সব ব্যাংকের সার্ভিস গুলোর চার্জ একই রকম নয়। তাই আপনি যে ব্যাংকে একাউন্ট ওপেন করবেন এবং কার্ড গ্রহণ করবেন সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অথবা ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এসকল তথ্য জেনে নিতে পারবেন।

ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায়

যেহেতু এই কার্ডের মাধ্যমে আমাদের জীবনে অহেতুক কিছু ব্যয় এবং অর্থ অপচয় হয় তাই অনেকেই এটি বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। কারণ ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপে গেলে এটি বন্ধ করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

যদি আপনি এই ধরনের সার্ভিস বন্ধ করতে চান তাহলে একটি সহজ উপায় আছে। আপনার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারের কল দিয়ে ওই কার্ডটি বাতিল করার জন্য অনুরোধ করতে পারবেন। আর যদি ব্যাংক আপনার নিকটে অবস্থিত হয় তাহলে সেখানে গিয়ে একাউন্ট সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলেই বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা করবেন।

তবে কার্ড বন্ধ করার অনুরোধ করার আগে অবশ্যই বকেয়া অর্থ বা বিল পরিশোধ করতে হবে।

ক্রেডিট কার্ড কত প্রকার

বর্তমান বাংলাদেশে ৪০ টিরও অধিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এই ধরনের সেবা দিচ্ছে। যাদের মধ্যে প্রায় সবাই ভিসা এবং মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে সার্ভিস দিয়ে থাকে। এর বাইরেও বেশ কয়েক ধরনের কার্ড সেবা রয়েছে। তবে আপনার কি কি কাজে এটা ব্যবহার করবেন ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে সেটি আলোচনা করলে তিনি আপনাকে নির্ধারিত সেবা প্রদান করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

বিভিন্ন ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে বাংলাদেশ এই ধরনের সেবার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাজারে অনেক বড় হচ্ছে। প্রয়োজন এবং সচেতনতার উপর ভিত্তি করে শিথিল হচ্ছে বিভিন্ন নিয়ম কানুন। তাই এই বিশেষ সার্ভিসটি গ্রহণ করার আগে ক্রেডিট কার্ড কি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী ছিল। আশা করি এখন আপনার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হবে। তবে মনে রাখবেন প্রয়োজন না হলে এই ধরনের সার্ভিস গ্রহণ না করাই ভালো।

বিষন্নতা থেকে মুক্তির উপায় জানতে এখানে প্রবেশ করুন।