বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার যোগ্যতা কি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪৫ বার পড়া হয়েছে

bd army officer qualifications

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

যুবক বয়সে প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া। কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণটি অনেকেরই হয়ে থাকে আবার অনেকেরই শুধু স্বপ্নই রয়ে যান। কারণ ডিফেন্স সার্ভিসে যোগদান করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক এবং অন্যান্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ আর্মি অফিসার হওয়ার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। আমি ধাপে ধাপে সেগুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

BMA লং কোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার যোগ্যতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সবচাইতে উপযোগী মাধ্যম হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিএমএ কোর্স। এর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

আবেদন করার যোগ্যতা Bd army officer requirements

এই কোর্সে আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২১ বছর পর্যন্ত হতে হবে। তবে যারা ইতিমধ্য সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরিরত আছেন তাদের জন্য বয়সসীমা ১৮ বছর থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত হতে হবে।

অবশ্যই জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং অবিবাহিত হতে হবে। (গ্রহণযোগ্য নয়)

শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে সাধারণত এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫ থেকে জিপিএ ৫.০০ চাওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এটি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে।

এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতার শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আপনি বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে আবেদন করতে পারবেন।

নিয়োগ পরীক্ষা এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া

আবেদন করার পর বেশ কয়েকটি ধাপে আপনার নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। যার প্রথম ধাপে হবে প্রিলিমিনারি বা লিখিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য একটি ছোট ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া হবে।

ভাইবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বাংলাদেশ আন্ত:বাহিনী নির্বাচন পরিষদে ৪ দিন অবস্থান করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে হয়। আইএসএসবি হতে যারা গ্রীন কার্ড পাবে তাদের মধ্য থেকেই চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয় সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে যোগদানের জন্য।

তিন বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ক্যাডেটদেরকে তিন বছরের জন্য চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিএসসি ইন মিলিটারি স্টাডিজ ডিগ্রিও প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে এদের পদবী থাকে অফিসার ক্যাডেট।

সফলভাবে দুঃসাহ কষ্ট সহ্য করে ট্রেনিং শেষ সম্পন্ন করলর বাংলাদেশ আর্মিতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদবীতে কমিশন প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাপেক্ষে নিম্নরূপে প্রমোশন পাওয়া যায়

১. সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
২. লেফটেন্যান্ট
৩. ক্যাপ্টেন
৪. মেজর
৫. লেফটেন্যান্ট কর্নেল
৬. কর্নেল
৭. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
৮. মেজর জেনারেল
৯. লেফটেন্যান্ট জেনারেল
১০. জেনারেল (সেনাপ্রধান)

কোন অফিসার যদি তার চাকরী জীবনে অসৎ কিংবা অনৈতিক কোন কাজ না করে, বিভিন্ন কোর্স এবং উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নিজের প্রফেশনাল জীবনকে সমৃদ্ধ করে তাহলে তার দক্ষতার ভিত্তিতে একটি সময় জেনারেল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বেতন ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের বেতন সাধারণত শুরু হয়ে থাকে ২৩,১০০ টাকা থেকে। এছাড়াও এর সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য ভাতা পাওয়া যায়। পদবী ভেদে সর্বোচ্চ বেতন ৮৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু মাস শেষে শুধুমাত্র যে এই টাকায় পায় বিষয়টি তা নয়, বিভিন্ন ভাতা, এলাউন্স এবং সেবা দিয়ে আরো বাড়তে কিছু অর্থ পাওয়া যায়।

বর্তমান স্কেল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর একজন মেজরের সর্বোচ্চ বেতন ৬৯ হাজার ৮৫০ টাকা। একজন ক্যাপ্টেনের বেতন সর্বনিম্ন ২৯ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৪০ টাকা পর্যন্ত। এই বেতনের বাইরে রয়েছে ইউনিফর্মের অ্যালাউন্স।

দক্ষতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন ছাড়াও রয়েছে দেশ-বিদেশেতে উচ্চত ডিগ্রি লাভের সুযোগ। রয়েছে রেশন প্রাপ্তির সুযোগ-সুবিধা, সন্তানদের লেখাপড়া এবং পরিবারের সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ।

প্রতিমাসে নির্ধারিত বেতন রয়েছে। বিদেশে জাতিসংঘ মিশনে গিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়নের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। পেশাগত উন্নতির লক্ষ্যে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি হতে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে।

শর্ট সার্ভিসের মাধ্যমে আর্মি অফিসার হওয়ার যোগ্যতা

দীর্ঘমেয়াদী কোর্স ছাড়াও সংক্ষিপ্ত কোর্সের মাধ্যমেও সরাসরি বাংলাদেশ আর্মি অফিসার হওয়া যায়। তবে এর জন্য দরকার নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা। নিম্নে এই সকল কোর্সের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আর্মি মেডিকেল কর্পস

যারা বিএসসি নার্সিং, এমবিবিএস এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন তাদেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল করো সরাসরি ক্যাপ্টেন, মেজর, লেফটেন্যান্ট ইত্যাদি পদে কমিশন প্রদান করা হয়। যদিও এই ধরনের চাকরি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়ে থাকে।

সেনাবাহিনীর ডেন্টাল কর্পস

উন্নত স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ডেন্টিস্টদের নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। এরাও স্বল্প মেয়াদে সরাসরি অফিসার হিসেবে যোগদান করতে পারে।

সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোর্স

প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনীতে এডুকেশন কোরে নিয়োগ প্রদান করে হয়ে থাকে। যোগ্যতা হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি এবং অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতা চাওয়া হয়।

এছাড়াও কম্পিউটার সাইন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, পদার্থ, রসায়ন, গণিত, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন ডিভিশনে অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। তবে এই ধরনের শর্ট কোর্সের মাধ্যমে যোগদান করলে কখনোই সেনাপ্রধান হওয়া যায় না। সেনাপ্রধান বা জেনারেল হওয়ার জন্য অবশ্যই মিলিটারি একাডেমির লং কোর্সের মাধ্যমে যোগদান করতে পারবে।

সৈনিক পদে যোগদান Bd army officer requirements

বছরের সাধারণত ২ বার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সৈনিক পদে লোকবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এসকল পদ থেকেও ভবিষ্যতে যোগ্যতার সাপেক্ষে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া যায়। তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ এবং পেশাগত দক্ষতা।

একজন সাধারণ সৈনিক তার দক্ষতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে প্রমোশন পেয়ে অরনারি ক্যাপ্টেন পর্যন্ত পদবী পেতে পারেন। সাধারণভাবে অর্ডিনারি সোলজার থেকে ওয়ারেন্ট অফিসার পর্যন্ত পদবী পাওয়া যায়। কিন্তু এর উর্ধ্বে গেলে অবশ্যই স্পেশাল পেশাগত দক্ষতা থাকতে হবে।

একজন সাধারণ সৈনিকের বেতন ৯ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বেতন ছাড়াও অন্যান্য রেশন সুবিধা ভাতা এবং অ্যালাউন্স প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্টের বেতন সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮৬৪০ টাকা পর্যন্ত।

তবে যারা বিদেশে মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় তারা মিশন চলাকালীন সময়ে এর কয়েক গুণ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়াও চাকরি জীবন শেষের পেনশনের সুবিধা তো আছেই।

অন্যান্য যোগ্যতা

শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও যে কোন সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা যাবে না। ফৌজদারী মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সরকারি চাকরিতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

এছাড়া পূর্বে সরকারি চাকরি হতে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিরাও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে চাকরির অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতা থাকা বাঞ্চনীয়। শরীরের কোন জায়গায় কাটা দাগ, দাঁতের সমস্যা, চোখের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা ইত্যাদি কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফেল করতে পারেন। তাই আবেদন করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নেওয়াই ভালো। চাইলে একজন সেনাবাহিনী ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগে থেকেই জেনে নিতে পারেন।

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং নৌ বাহিনীতেও অফিসার হওয়ার যোগ্যতা মোটামুটি একই রকমের। তবে নৌ বাহিনীতে যোগদান করার জন্য অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে। বিমান বাহিনীতে আরো স্পেশাল কিছু শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আমাদের শেষ কথা

সরকারি চাকরি বিশেষ করে প্রতিরক্ষা বাহিনী চাকরি গুলোতে নির্ধারিত বেতন ছাড়াও নানারকম আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও ডিফেন্সের অফিসাররা অবসর আসার পরেও ভালো ভালো বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারে। এতে করে ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত বলা যায়। তাছাড়াও সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া গর্বের বিষয়। কারণ এরা বাংলাদেশের মানুষের এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ আর্মির ভালো সুনাম এবং খ্যাতি রয়েছে।

বৃষ্টির পানি হতে ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে যা যা করবেন, জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার যোগ্যতা কি

আপডেট সময় : ০৮:৪৬:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যুবক বয়সে প্রায় সবারই স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া। কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণটি অনেকেরই হয়ে থাকে আবার অনেকেরই শুধু স্বপ্নই রয়ে যান। কারণ ডিফেন্স সার্ভিসে যোগদান করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক, মানসিক এবং অন্যান্য দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশ আর্মি অফিসার হওয়ার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। আমি ধাপে ধাপে সেগুলো আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

BMA লং কোর্সের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়ার যোগ্যতা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সবচাইতে উপযোগী মাধ্যম হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিএমএ কোর্স। এর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

আবেদন করার যোগ্যতা Bd army officer requirements

এই কোর্সে আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২১ বছর পর্যন্ত হতে হবে। তবে যারা ইতিমধ্য সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরিরত আছেন তাদের জন্য বয়সসীমা ১৮ বছর থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত হতে হবে।

অবশ্যই জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং অবিবাহিত হতে হবে। (গ্রহণযোগ্য নয়)

শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে সাধারণত এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫ থেকে জিপিএ ৫.০০ চাওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এটি স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে।

এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতার শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আপনি বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদী কোর্সে আবেদন করতে পারবেন।

নিয়োগ পরীক্ষা এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া

আবেদন করার পর বেশ কয়েকটি ধাপে আপনার নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। যার প্রথম ধাপে হবে প্রিলিমিনারি বা লিখিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য একটি ছোট ভাইভা পরীক্ষা নেওয়া হবে।

ভাইবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বাংলাদেশ আন্ত:বাহিনী নির্বাচন পরিষদে ৪ দিন অবস্থান করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে হয়। আইএসএসবি হতে যারা গ্রীন কার্ড পাবে তাদের মধ্য থেকেই চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয় সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে যোগদানের জন্য।

তিন বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ক্যাডেটদেরকে তিন বছরের জন্য চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিএসসি ইন মিলিটারি স্টাডিজ ডিগ্রিও প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে এদের পদবী থাকে অফিসার ক্যাডেট।

সফলভাবে দুঃসাহ কষ্ট সহ্য করে ট্রেনিং শেষ সম্পন্ন করলর বাংলাদেশ আর্মিতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদবীতে কমিশন প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে দক্ষতা এবং যোগ্যতার সাপেক্ষে নিম্নরূপে প্রমোশন পাওয়া যায়

১. সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
২. লেফটেন্যান্ট
৩. ক্যাপ্টেন
৪. মেজর
৫. লেফটেন্যান্ট কর্নেল
৬. কর্নেল
৭. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
৮. মেজর জেনারেল
৯. লেফটেন্যান্ট জেনারেল
১০. জেনারেল (সেনাপ্রধান)

কোন অফিসার যদি তার চাকরী জীবনে অসৎ কিংবা অনৈতিক কোন কাজ না করে, বিভিন্ন কোর্স এবং উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে নিজের প্রফেশনাল জীবনকে সমৃদ্ধ করে তাহলে তার দক্ষতার ভিত্তিতে একটি সময় জেনারেল হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

বেতন ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসারদের বেতন সাধারণত শুরু হয়ে থাকে ২৩,১০০ টাকা থেকে। এছাড়াও এর সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য ভাতা পাওয়া যায়। পদবী ভেদে সর্বোচ্চ বেতন ৮৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু মাস শেষে শুধুমাত্র যে এই টাকায় পায় বিষয়টি তা নয়, বিভিন্ন ভাতা, এলাউন্স এবং সেবা দিয়ে আরো বাড়তে কিছু অর্থ পাওয়া যায়।

বর্তমান স্কেল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর একজন মেজরের সর্বোচ্চ বেতন ৬৯ হাজার ৮৫০ টাকা। একজন ক্যাপ্টেনের বেতন সর্বনিম্ন ২৯ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৪০ টাকা পর্যন্ত। এই বেতনের বাইরে রয়েছে ইউনিফর্মের অ্যালাউন্স।

দক্ষতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন ছাড়াও রয়েছে দেশ-বিদেশেতে উচ্চত ডিগ্রি লাভের সুযোগ। রয়েছে রেশন প্রাপ্তির সুযোগ-সুবিধা, সন্তানদের লেখাপড়া এবং পরিবারের সদস্যদের উন্নত চিকিৎসার সুযোগ।

প্রতিমাসে নির্ধারিত বেতন রয়েছে। বিদেশে জাতিসংঘ মিশনে গিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায়নের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। পেশাগত উন্নতির লক্ষ্যে দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি হতে শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে।

শর্ট সার্ভিসের মাধ্যমে আর্মি অফিসার হওয়ার যোগ্যতা

দীর্ঘমেয়াদী কোর্স ছাড়াও সংক্ষিপ্ত কোর্সের মাধ্যমেও সরাসরি বাংলাদেশ আর্মি অফিসার হওয়া যায়। তবে এর জন্য দরকার নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা। নিম্নে এই সকল কোর্সের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

আর্মি মেডিকেল কর্পস

যারা বিএসসি নার্সিং, এমবিবিএস এবং এ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন তাদেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেডিকেল করো সরাসরি ক্যাপ্টেন, মেজর, লেফটেন্যান্ট ইত্যাদি পদে কমিশন প্রদান করা হয়। যদিও এই ধরনের চাকরি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়ে থাকে।

সেনাবাহিনীর ডেন্টাল কর্পস

উন্নত স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ডেন্টিস্টদের নিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে। এরাও স্বল্প মেয়াদে সরাসরি অফিসার হিসেবে যোগদান করতে পারে।

সেনাবাহিনীর এডুকেশন কোর্স

প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনীতে এডুকেশন কোরে নিয়োগ প্রদান করে হয়ে থাকে। যোগ্যতা হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি এবং অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতা চাওয়া হয়।

এছাড়াও কম্পিউটার সাইন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, পদার্থ, রসায়ন, গণিত, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন ডিভিশনে অফিসার হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। তবে এই ধরনের শর্ট কোর্সের মাধ্যমে যোগদান করলে কখনোই সেনাপ্রধান হওয়া যায় না। সেনাপ্রধান বা জেনারেল হওয়ার জন্য অবশ্যই মিলিটারি একাডেমির লং কোর্সের মাধ্যমে যোগদান করতে পারবে।

সৈনিক পদে যোগদান Bd army officer requirements

বছরের সাধারণত ২ বার বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সৈনিক পদে লোকবল নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এসকল পদ থেকেও ভবিষ্যতে যোগ্যতার সাপেক্ষে সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া যায়। তবে তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম, বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ এবং পেশাগত দক্ষতা।

একজন সাধারণ সৈনিক তার দক্ষতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে প্রমোশন পেয়ে অরনারি ক্যাপ্টেন পর্যন্ত পদবী পেতে পারেন। সাধারণভাবে অর্ডিনারি সোলজার থেকে ওয়ারেন্ট অফিসার পর্যন্ত পদবী পাওয়া যায়। কিন্তু এর উর্ধ্বে গেলে অবশ্যই স্পেশাল পেশাগত দক্ষতা থাকতে হবে।

একজন সাধারণ সৈনিকের বেতন ৯ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই বেতন ছাড়াও অন্যান্য রেশন সুবিধা ভাতা এবং অ্যালাউন্স প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্টের বেতন সর্বনিম্ন ১৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮৬৪০ টাকা পর্যন্ত।

তবে যারা বিদেশে মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় তারা মিশন চলাকালীন সময়ে এর কয়েক গুণ বেশি বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়াও চাকরি জীবন শেষের পেনশনের সুবিধা তো আছেই।

অন্যান্য যোগ্যতা

শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও যে কোন সরকারি চাকরিতে যোগদানের জন্য কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা যাবে না। ফৌজদারী মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সরকারি চাকরিতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

এছাড়া পূর্বে সরকারি চাকরি হতে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিরাও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে চাকরির অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতা থাকা বাঞ্চনীয়। শরীরের কোন জায়গায় কাটা দাগ, দাঁতের সমস্যা, চোখের সমস্যা, হাড়ের সমস্যা ইত্যাদি কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফেল করতে পারেন। তাই আবেদন করার আগে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নেওয়াই ভালো। চাইলে একজন সেনাবাহিনী ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগে থেকেই জেনে নিতে পারেন।

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং নৌ বাহিনীতেও অফিসার হওয়ার যোগ্যতা মোটামুটি একই রকমের। তবে নৌ বাহিনীতে যোগদান করার জন্য অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে। বিমান বাহিনীতে আরো স্পেশাল কিছু শারীরিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আমাদের শেষ কথা

সরকারি চাকরি বিশেষ করে প্রতিরক্ষা বাহিনী চাকরি গুলোতে নির্ধারিত বেতন ছাড়াও নানারকম আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও ডিফেন্সের অফিসাররা অবসর আসার পরেও ভালো ভালো বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করতে পারে। এতে করে ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত বলা যায়। তাছাড়াও সেনাবাহিনীর অফিসার হওয়া গর্বের বিষয়। কারণ এরা বাংলাদেশের মানুষের এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ আর্মির ভালো সুনাম এবং খ্যাতি রয়েছে।

বৃষ্টির পানি হতে ফোনকে সুরক্ষিত রাখতে যা যা করবেন, জানতে এখানে প্রবেশ করুন।