ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি লাগে এবং নিয়ম জানুন
- আপডেট সময় : ০৮:৫৩:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
টাকা পয়সা লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। আজকে আমি সেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি লাগে এবং কিভাবে হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। অনেকেরই ইচ্ছা থাকে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট করার কিন্তু এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় দ্বিধাবোধ করেন। তাই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন এবং খুঁটিনাটি সব বিষয় জেনে নিন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা খুবই জরুরী। এর মাধ্যমে দেশ-বিদেশে অর্থ লেনদেন, টাকা সঞ্চয় করা, ডিপোজিট করা, লোন উঠানো ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। এমনকি আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন কিংবা ছোট করে বিজনেস থাকে তাহলে তো আবশ্যিকভাবে এটি লাগবে।
তাই আপনার যদি ব্যাংক একাউন্ট না থাকে তাহলে সেটি খোলা খুবই জরুরী। আবার অনেকেই মনে করেন একাউন্ট ওপেন করা অনেক বেশি ঝামেলার কাজ। তাই নিজেকে এই ঝামেলায় জড়াতে চান না। কিন্তু বিশ্বাস করুন বাস্তবিক পক্ষে এটি খুবই সহজ একটি কাজ।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম কি (Open Bank Account)
সর্বপ্রথম আপনি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে কোন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ ব্যাংকে আপনি একাউন্ট করবেন। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে বেশ কিছু ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আপনার পছন্দমত যেকোনোটিতে আপনার অ্যাকাউন্ট করতে পারেন।
তবে গ্রামীণ, কর্মসংস্থান ইত্যাদি তফসিলি ব্যাংক গুলোতে আপনি কোন অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন না। আপনার বাসার কিংবা কর্মস্থলের পাশে যেটি রয়েছে সেখানেই একটি হিসাব খোলা ভালো। এতে করে যে কোন প্রয়োজনে আপনি সকলের যায় সেখানে যাতায়াত করতে পারবেন।
শুধুমাত্র সাপ্তাহিক বন্ধের দিন, তাদের অনলাইন কার্ড সুবিধা কেমন ইত্যাদি বিবেচনায় রাখলেই হবে।
ব্যাংক একাউন্টের ধরন কি কি
আপনার প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়ে গেলে এবার ঠিক করতে হবে কোন ধরনের অ্যাকাউন্ট আপনি ওপেন করবেন। চাকরিজীবীদের বেতন নেওয়ার জন্য স্যালারি একাউন্ট করা হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা কারেন্ট একাউন্ট করে থাকেন।
শুধুমাত্র টাকা জমা এবং সেগুলোকে উত্তোলনের জন্য সবচাইতে জনপ্রিয় হচ্ছে সেভিংস একাউন্ট। এর মাধ্যমে আপনি যখন খুশি টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং যখন খুশি টাকা উঠাতে পারবেন। জমাকৃত টাকার উপর বাৎসরিক একটি ইন্টারেস্টও প্রদান করা হয়ে থাকে।
আবার অনেকেই সুদ মুক্ত ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে চান, তাদের জন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা।
ব্যাংক একাউন্টের অন্যান্য প্রকারভেদ
• আপনি যদি এই প্রতিমাসে শুধু নির্দিষ্ট হারে টাকা রাখতে চান তাহলে করতে পারেন ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট। এটির মাধ্যমে আপনাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দেওয়া হবে। সেটি ১ বছর থেকে ১০ বছর বা যে কোন মেয়াদী হতে পারে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী। আপনাকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হবে এবং মেয়াদ শেষে ব্যাংক কিছু লভ্যাংশ সহ আপনাকে পুরো টাকা প্রদান করবে। যেটাকে আমরা ফিক্সড ডিপোজিট নামে চিনে থাকি।
• আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে করতে পারেন চলতে হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট। এই ধরনের অ্যাকাউন্টে কোন ইন্টারেস্ট বা সুদ প্রদান করা হয় না। বরং বছর শেষে আপনার ব্যবহারের উপরে নির্ভর করে কিছু পরিমাণে চার্জ কেটে রাখা হবে। ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সেটা জানার আগে এই বিষয় গুলি সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার খুবই জরুরী।
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে
এবার আসি কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। সে সম্পর্কে নিচে তালিকা উপস্থাপন করা হলো।
১। আবেদনের ফরম
আপনি যে ধরনের হিসাব খুলতে চান সেটার উপর নির্ভর করে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। সেখানে সকল ধরনের তথ্যাবলী সুন্দর স্পষ্ট করে এবং নির্ভুলভাবে লিখার চেষ্টা করুন।
২। সিগনেচার
যেকোনো ধরনের অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সিগনেচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি পরবর্তীতে চেক বইয়ের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন এবং অন্যান্য যে কোন কাজই করেন না কেন এই সিগনেচারটি প্রয়োজন হবে। তাই সতর্কতার সাথে এটি প্রদান করুন।
৩। ছবি
আপনার সত্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি যেটি অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে। অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক ভেদে ৩ থেকে ৫ কপি পর্যন্ত ছবির প্রয়োজন হতে পারে। আর আপনার নমিনির অবশ্যই ১ কপি ছবি লাগবে।
৪। নমিনীর কাগজপত্র
ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সেটির মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই নমিনীর কাগজপত্র। নমিনী হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি আপনার অবর্তমানে ব্যাংকের টাকার উত্তরাধিকার হবেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ছবি প্রয়োজন হবে।। অনেক ব্যাংক আবার ভোটার আইডি কার্ডের মূল কপি দেখতে চায়।
৫। টাকা
এটি মূলত নির্ভর করছে আপনি কোন ধরনের হিসাব খুলছেন এবং কোন ব্যাংকে। সাধারণত একটি সেভিংস একাউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। তবে এই টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে থেকে যাবে।
৬। আপনার আয়ের তথ্য
আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে সেখানকার আইডি কার্ড, স্যালারির কাগজ পে স্লিপ, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার ইত্যাদি তথ্যগুলো চাইতে পারে। এগুলো দ্বারা মূলত আপনার আয়ের উৎস নিশ্চিত করা হয়।
৭। ব্যবসায়িক কাগজপত্র
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যে কাগজপত্র গুলো লাগে সেটির মধ্যে এটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একজন বিজনেসম্যান হয়ে থাকেন তাহলে আপনার লাইসেন্স বা ট্যাক্সের কাগজ জমা দিতে হতে পারে। কারণ প্রতিটি ব্যাংক তার গ্রাহকদের অর্থের উৎস নিশ্চিত করে থাকে।
ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় সচেতনতা
যদিও সকল কার্যক্রম ব্যাংকের কর্মকর্তারাই করে সম্পন্ন করে দেয় তবুও আপনার কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
• আপনার কাছ থেকে সকল কাগজের শুধুমাত্র ফটোকপি জমা নেবে। মূল কপি গুলো আপনার কাছে রেখে দিবেন।
• একাউন্ট খোলা, চেক বই উত্তোলন, কার্ড উত্তোলন ইত্যাদি কাজে আপনি নিজেই সবসময় ব্যাংকে যাবেন।
• আপনার বর্তমান কিংবা স্থায়ী ঠিকানায় ব্যাংকের থেকে একটি শুভেচ্ছা চিঠি পাঠানো হতে পারে।
• আপনার অ্যাকাউন্ট নাম্বার চেক বইয়ের নাম্বার ব্যাংকের কার্ড নাম্বার পিন ইত্যাদি তথ্য গুলো খুবই সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করুন।
• ভোটার আইডি কার্ডের সাথে আপনার নাম ও ঠিকানা সম্পূর্ণ মিল রয়েছে কিনা সেটা যাচাই করে নিন।
আমাদের শেষ কথা
বর্তমান সময়ে ব্যাংকে একটি হিসাব বা অ্যাকাউন্ট না থাকলে নানা রকম বিড়াম্বনায় পড়তে হয়। সেই সাথে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতের ফলে সমস্ত কার্যক্রম ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়। তাই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে সেই তথ্য অনুযায়ী সকল কাগজপত্র প্রস্তুত করে আজই খুলে ফেলুন নিজের একটি অ্যাকাউন্ট।
থাইরয়েড সমস্যা প্রতিরোধে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে জানতে এখানে প্রবেশ করুন।