প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৬:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৬ বার পড়া হয়েছে

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যার সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় ইউরিন ইনফেকশন। আমাদের পরিবারের কিংবা আশেপাশে প্রায়ই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যার ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়। নারী-পুরুষ ভেদে সকলে জীবনের কোনো না কোনো সময় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি মূলত সরাসরি কোন রোগ নয়। এটিকে অন্য রোগের উপকসর্গ বলা যেতে পারে। আবার অনেক সময় ছত্রাক কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আর সংক্রমণ হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ

একেকজনের এই সমস্যাটি হয় একেক কারণে। চলুন জেনে নেই এই সমস্যার কি কি কারণ থাকতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া

নারী এবং পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হিসেবে অন্যতম দায়ী হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা। পানি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি এই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সহ এই ধরনের ব্যথার সম্মুখীন হতে পারেন।

ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের আক্রমণ

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি নারীদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক। মেয়েদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী সাধারণত পায়ুপথের কাছাকাছিতে অবস্থিত। যার কারণে পায়ুপথ হতে অনেক ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে আক্রমণ করতে পারে। যেটা থেকে এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

অসচেতনতা

মেয়েদের পিরিয়ডের সময় সঠিক পদ্ধতিতে ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার না করলে সেখান থেকে জীবাণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করে সংক্রমনের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময় সঙ্গীর সাথে মেলামেশার ফলেও এই জ্বালাপোড়ার হতে পারে। তাই এই কারণগুলো খুঁজে বের করে যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা উচিত।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ

সাধারণত পেশাবে জ্বালাপোড়া ইউরিন ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যেগুলো আপনি একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।

• প্রস্রাব করার সময় পেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা অনুভব হয় এবং পিঠেও মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভব হয়।

• পর্যাপ্ত পরিমাণে পেশাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও ঠিকভাবে পেশাব ক্লিয়ার হচ্ছে না। এটিও ইউরিন ইনফেকশন এর অন্যতম একটি লক্ষণ।

• এছাড়াও সাধারনের তুলনায় গন্ধযুক্ত, ঘোলাটে এবং লাল রঙের পেশাব দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে ইনফেকশন হতে পারে।

এ ধরনের জ্বালাপোড়া যদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনি যদি এরকম কোন লক্ষণ নিজের ভেতরে পরিলক্ষিত হতে দেখেন তাহলে কখনোই দেরি করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আবার প্রাকৃতিকভাবে কিংবা ঘরোয়া উপায় গুলিও অবলম্বন করতে পারেন।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন

আমি আগেই উল্লেখ করেছি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভাবে আমাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার রোগ তৈরি হয়। তাই এ জাতীয় রোগ কিংবা ইউরিন ইনফেকশন রোধে পানি পানের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত পানি পান করার ফলে আপনার দৈনিক পেশাবের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং দেহে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস গুলো দূর হয়ে যাবে। আপনি যদি খুব বেশি এধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে কুসুম কুসুম গরম পানি পান করুন। এটি অনেক দ্রুত কাজ করে।

এছাড়াও তীব্র গরমে সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের পানি খাওয়ার বিকল্প কোনো কিছু নেই। তবে সারাদিন কাজ শেষে হঠাৎ করেই ঠান্ডা পানি পান করবেন না কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত স্যালাইন পান করাও উচিত নয়।

বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খান

আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অসুখ এবং ক্লান্তির জন্য দায়ী জাঙ্কফুড এবং বাইরের ভাজা পোড়া খাবার। এই ধরনের খাবার কম খেয়ে যত বেশি সম্ভব সবুজ শাকসবজি এবং মৌসুমী ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে আপনার দেহ সুস্থ থাকবে এবং কাজেও অনেক বেশি শক্তি অনুভব করবেন। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খান।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে গরম সেঁক নিন

ইনফেকশন দূর করতে এবং পেটের ব্যথা কমাতে গরম সেকঁ নিতে পারেন। এর জন্য একটি হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন অথবা একটি বোতলে গরম পানি নিয়ে কাপড় দিয়ে পেচিয়ে সেটি দিয়ে পেট এবং পিঠের অংশে আলতো করে সেক দিতে পারেন।

এছাড়াও আজকাল বাজারে অনেক ধরনের হিটিং প্যাড পাওয়া যায় যেগুলো মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করা খুবই নিরাপদ। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় না।

পানি শূন্যতা

তীব্র গরমে যারা বাইরের কাজ করে তাদের শরীরে এমনিতেই পানি শূন্যতা দেখা যায়। এছাড়াও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পাশাপাশি তরমুজ, আপেল, আঙ্গুর, ডালিম, ডাব ইত্যাদি খেতে পারেন। এই ধরনের খাবার শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে খুবই কার্যকরী। সেই সাথে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে দই খান

প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে মিষ্টি দই এবং টক দইতে। এ সকল ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এরা অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু থেকে আপনাকে রক্ষা করে। এছাড়াও টক দই এবং মিষ্টি দই খাওয়ার ফলে শরীরের পিএইচ বৃদ্ধি হয়। তাই দৈনিক কিছু পরিমাণে এধরনের খাবার খেতে পারেন।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমানোর ভেষজ উপায়

প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা হিসেবে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠিক তেমনিভাবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে নিম পাতার রস এবং চিরতার রস খুবই কার্যকরী।

এছাড়াও আদার রস এবং জিরার গুড়ো মিশিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে সামান্য উত্তপ্ত করে পান করলেও এই ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

সঙ্গীর সাথে মেলামেশা

যেহেতু এই ধরনের রোগ ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে তাই আপনার সঙ্গীরা এ সমস্যাটি আছে কিনা যাচাই করে নিন। কারণ মেলামেশার ফলে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে এটির সহজেই সংক্রমণ হতে পারে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি

অন্যান্য স্বাভাবিক দিন গুলোর তুলনায় যারা রমজান মাসে রোজা রাখেন তাদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর পাশাপাশিও প্রচন্ড রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বাইরে গেলে কিংবা তাপ প্রবাহের কারণেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে। কারণ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীরের পানি বের হয়ে যায়।

এ ধরনের রোগে সাধারণত প্রস্রাব একদম গারো হলুদ হয়ে যায় অথবা লালচে হয়ে যায় এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এর জন্য দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। বিভিন্ন ফলমূল এবং জুসের পাশাপাশি ইসুবগুলের ভুষি শরবতের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

আর যদি ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের কারণে এই ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে কার্যকরী সমাধান হচ্ছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। কারণ আমাদের দেহের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ভিটামিন সি। সেই সাথে মূত্রনালী ভালো রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস হচ্ছে লেবু। এছাড়াও আনারস এই সমস্যা খুবই দ্রুত সমাধান করতে পারে। আনারসকে অনেকটা প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা যায়। বর্তমানে আনারসের সিজন চলছে। এই পুষ্টিকর এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য এই উপকারী ফলটি খেতে পারেন।

আমাদের সতর্কতা

সামান্য কিছু ঘরোয়া কিংবা প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করা যায়। তাই আপনার এই রোগটিকে আরো বেশি জটিল হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আর যদি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং সঠিক পদ্ধতি গুলো মেনে চলেও সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্বার্থপর বন্ধুকে কিভাবে চিনবেন? জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার

আপডেট সময় : ০৬:৫২:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যার সাথে আমরা সকলেই কম বেশি পরিচিত। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় ইউরিন ইনফেকশন। আমাদের পরিবারের কিংবা আশেপাশে প্রায়ই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যার ব্যক্তিদের দেখতে পাওয়া যায়। নারী-পুরুষ ভেদে সকলে জীবনের কোনো না কোনো সময় এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি মূলত সরাসরি কোন রোগ নয়। এটিকে অন্য রোগের উপকসর্গ বলা যেতে পারে। আবার অনেক সময় ছত্রাক কিংবা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা আর সংক্রমণ হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা যায়।

প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ

একেকজনের এই সমস্যাটি হয় একেক কারণে। চলুন জেনে নেই এই সমস্যার কি কি কারণ থাকতে পারে।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খাওয়া

নারী এবং পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হিসেবে অন্যতম দায়ী হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা। পানি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি এই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সহ এই ধরনের ব্যথার সম্মুখীন হতে পারেন।

ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের আক্রমণ

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি নারীদের জন্য বেশ কষ্টদায়ক। মেয়েদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী সাধারণত পায়ুপথের কাছাকাছিতে অবস্থিত। যার কারণে পায়ুপথ হতে অনেক ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে আক্রমণ করতে পারে। যেটা থেকে এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।

অসচেতনতা

মেয়েদের পিরিয়ডের সময় সঠিক পদ্ধতিতে ন্যাপকিন বা কাপড় ব্যবহার না করলে সেখান থেকে জীবাণু মূত্রনালীতে প্রবেশ করে সংক্রমনের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেক সময় সঙ্গীর সাথে মেলামেশার ফলেও এই জ্বালাপোড়ার হতে পারে। তাই এই কারণগুলো খুঁজে বের করে যথাসময়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা উচিত।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ

সাধারণত পেশাবে জ্বালাপোড়া ইউরিন ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যেগুলো আপনি একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন।

• প্রস্রাব করার সময় পেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা অনুভব হয় এবং পিঠেও মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভব হয়।

• পর্যাপ্ত পরিমাণে পেশাবের বেগ থাকা সত্ত্বেও ঠিকভাবে পেশাব ক্লিয়ার হচ্ছে না। এটিও ইউরিন ইনফেকশন এর অন্যতম একটি লক্ষণ।

• এছাড়াও সাধারনের তুলনায় গন্ধযুক্ত, ঘোলাটে এবং লাল রঙের পেশাব দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে ইনফেকশন হতে পারে।

এ ধরনের জ্বালাপোড়া যদি অতিমাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে জীবাণু দেহের ভেতরে প্রবেশ করে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনি যদি এরকম কোন লক্ষণ নিজের ভেতরে পরিলক্ষিত হতে দেখেন তাহলে কখনোই দেরি করা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আবার প্রাকৃতিকভাবে কিংবা ঘরোয়া উপায় গুলিও অবলম্বন করতে পারেন।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করার ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন

আমি আগেই উল্লেখ করেছি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভাবে আমাদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার রোগ তৈরি হয়। তাই এ জাতীয় রোগ কিংবা ইউরিন ইনফেকশন রোধে পানি পানের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত পানি পান করার ফলে আপনার দৈনিক পেশাবের মাত্রা বেড়ে যাবে এবং দেহে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস গুলো দূর হয়ে যাবে। আপনি যদি খুব বেশি এধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে কুসুম কুসুম গরম পানি পান করুন। এটি অনেক দ্রুত কাজ করে।

এছাড়াও তীব্র গরমে সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের পানি খাওয়ার বিকল্প কোনো কিছু নেই। তবে সারাদিন কাজ শেষে হঠাৎ করেই ঠান্ডা পানি পান করবেন না কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত স্যালাইন পান করাও উচিত নয়।

বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি খান

আমাদের শরীরের বেশিরভাগ অসুখ এবং ক্লান্তির জন্য দায়ী জাঙ্কফুড এবং বাইরের ভাজা পোড়া খাবার। এই ধরনের খাবার কম খেয়ে যত বেশি সম্ভব সবুজ শাকসবজি এবং মৌসুমী ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে করে আপনার দেহ সুস্থ থাকবে এবং কাজেও অনেক বেশি শক্তি অনুভব করবেন। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে দৈনিক প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খান।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে গরম সেঁক নিন

ইনফেকশন দূর করতে এবং পেটের ব্যথা কমাতে গরম সেকঁ নিতে পারেন। এর জন্য একটি হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন অথবা একটি বোতলে গরম পানি নিয়ে কাপড় দিয়ে পেচিয়ে সেটি দিয়ে পেট এবং পিঠের অংশে আলতো করে সেক দিতে পারেন।

এছাড়াও আজকাল বাজারে অনেক ধরনের হিটিং প্যাড পাওয়া যায় যেগুলো মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্যবহার করা খুবই নিরাপদ। এতে করে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় না।

পানি শূন্যতা

তীব্র গরমে যারা বাইরের কাজ করে তাদের শরীরে এমনিতেই পানি শূন্যতা দেখা যায়। এছাড়াও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পাশাপাশি তরমুজ, আপেল, আঙ্গুর, ডালিম, ডাব ইত্যাদি খেতে পারেন। এই ধরনের খাবার শরীরের পানি শূন্যতা পূরণে খুবই কার্যকরী। সেই সাথে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন তবে খুব বেশি পরিমাণে নয়।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমাতে দই খান

প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া রয়েছে মিষ্টি দই এবং টক দইতে। এ সকল ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এরা অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু থেকে আপনাকে রক্ষা করে। এছাড়াও টক দই এবং মিষ্টি দই খাওয়ার ফলে শরীরের পিএইচ বৃদ্ধি হয়। তাই দৈনিক কিছু পরিমাণে এধরনের খাবার খেতে পারেন।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া কমানোর ভেষজ উপায়

প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা হিসেবে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠিক তেমনিভাবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া দূর করতে নিম পাতার রস এবং চিরতার রস খুবই কার্যকরী।

এছাড়াও আদার রস এবং জিরার গুড়ো মিশিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে সামান্য উত্তপ্ত করে পান করলেও এই ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

সঙ্গীর সাথে মেলামেশা

যেহেতু এই ধরনের রোগ ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দ্বারা হয়ে থাকে তাই আপনার সঙ্গীরা এ সমস্যাটি আছে কিনা যাচাই করে নিন। কারণ মেলামেশার ফলে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে এটির সহজেই সংক্রমণ হতে পারে।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি

অন্যান্য স্বাভাবিক দিন গুলোর তুলনায় যারা রমজান মাসে রোজা রাখেন তাদের এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। এর পাশাপাশিও প্রচন্ড রৌদ্রজ্জ্বল দিনে বাইরে গেলে কিংবা তাপ প্রবাহের কারণেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে। কারণ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীরের পানি বের হয়ে যায়।

এ ধরনের রোগে সাধারণত প্রস্রাব একদম গারো হলুদ হয়ে যায় অথবা লালচে হয়ে যায় এবং সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের এর জন্য দিনে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। বিভিন্ন ফলমূল এবং জুসের পাশাপাশি ইসুবগুলের ভুষি শরবতের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

আর যদি ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের কারণে এই ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে কার্যকরী সমাধান হচ্ছে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। কারণ আমাদের দেহের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ভিটামিন সি। সেই সাথে মূত্রনালী ভালো রাখে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস হচ্ছে লেবু। এছাড়াও আনারস এই সমস্যা খুবই দ্রুত সমাধান করতে পারে। আনারসকে অনেকটা প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক বলা যায়। বর্তমানে আনারসের সিজন চলছে। এই পুষ্টিকর এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য এই উপকারী ফলটি খেতে পারেন।

আমাদের সতর্কতা

সামান্য কিছু ঘরোয়া কিংবা প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করা যায়। তাই আপনার এই রোগটিকে আরো বেশি জটিল হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আর যদি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং সঠিক পদ্ধতি গুলো মেনে চলেও সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

স্বার্থপর বন্ধুকে কিভাবে চিনবেন? জানতে এখানে প্রবেশ করুন।